মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো দাঁত। কিন্তু, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও অবহেলার কারণে আমাদের প্রায়শই নানা রকম দাঁতের সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই দাঁতের সুরক্ষায় একটু সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে পড়বেনঃ
আমাদের মুখের মধ্যে সবসময় কিছু প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া(প্লাক ব্যাক্টেরিয়া) উপস্থিত থাকে। প্রত্যহ খাবার গ্রহণের পর দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা ভক্ষণ করে এরা মুখের মধ্যে অম্লীয় পরিবেশ তৈরি করে যা আমাদের দাঁতের "এনামেল"-কে( বিশেষ ধরণের খনিজ উপাদান) ক্ষয় করে ফেলে। এই ক্ষয় দ্রুত পূরণ না হলে আস্তে আস্তে তা দাঁতের মধ্যে বড় গর্ত (ডেন্টাল ক্যাবিটি) তৈরি করে। চিকিৎসা ব্যতীত, এই গর্তগুলি সময়ের সাথে সাথে বড় হতে পারে এবং এমনকি পুরো দাঁতকে নষ্ট করে দেয়।
প্লাক থেকে সৃষ্ট অ্যাসিডের কারণে দাঁতের (ডেন্টিন) পরবর্তী স্তরেও ক্ষয় হয়ে যেতে পারে যা অবশেষে রুট গহ্বর (রুট ক্যাবিটি) হিসাবে পরিচিত তা ঘটায়। ফলস্বরূপ, আপনার দাঁতের স্নায়ু উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আপনি খাওয়া বা পান করার সময় দাঁতের গোড়ায় ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
কি কি কারণে দাঁত ক্ষয় হতে পারে?
দাঁত ক্ষয় তখনই ঘটে যখন শর্করা জাতীয় (কার্বোহাইড্রেটযুক্ত) খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকা পড়ে এবং ব্রাশিং এবং ফ্লসিং দিয়ে সম্পূর্ণ অপসারণ করা না হয়।
দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলি হ'ল চিনিযুক্ত, আঠালো খাবার এবং পানীয়। যত বেশি চিনি খাওয়া হয়, তত বেশি এসিড উৎপন্ন হয় যা এনামেলকে দূর্বল করে দাঁতের ক্ষয়কে তরান্বিত করে।এছাড়া যেসব কারণগুলো দাঁত ক্ষয়ের জন্য দায়ী তা হলঃ
১. নিয়মিত দাঁত না মাজাঃ নিয়মিত সকাল ও রাত দুবার করে দাঁত না মাজা।
২.প্লাক গঠনঃ ব্যাকটেরিয়া, খাদ্যকণা এবং লালা একত্রে মিশে প্লাক গঠন করে যা দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের জন্য অন্যতম দায়ী।
৩.শুষ্ক মুখঃ লালা দাঁত হতে প্লাক অপসারণে সহায়তা করে। শুকনো মুখে প্লাক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৪.খাওয়া-দাওয়াঃ বিশেষ জাতীয় খাবার,যেমন দুধ বা সোডা পান করার পরে, বা শুকনো ফল, শুকনো গম, ক্যান্ডি, ক্যারামেল, টাফি, কিসমিস, কুকিজ এবং মিন্ট-ক্যান্ডি খাওয়ার পরে দাঁত ভালোমত পরিষ্কার না করা।
৫.ব্যাকটেরিয়া ও এসিডিটিঃ মুখ ও পেটের অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া।
দাঁতের ক্ষয় রোধে করনীয় সমূহঃ
টুথব্রাশঃ একটি ভালো মানের টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে যার বিপরীত পাশে জিহবা পরিষ্কার করার জন্য খাঁজ যুক্ত থাকবে। এছাড়া,সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান মিসওয়াক (নিমের ডাল) ব্যবহারে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিবার খাবার শেষে মিসওয়াক করলে আপনার দাঁতের মাড়ি শক্ত হবে, স্মৃতি শক্তি প্রখর হবে।
টুথপেষ্টঃ বাজারে প্রচলিত আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন (এডিএ) দ্বারা অনুমোদিত উন্নত মানের টুথপেষ্ট ব্যবহার করতে হবে।
ফ্লস ব্যবহারঃ প্রতিদিন অন্তত একবার ফ্লস ব্যবহার করতে হবে যা দাঁতের ফাঁকে গভীরে খাদ্যকণা জমতে দেয় নাহ
মাউথওয়াশঃ এটি ব্যবহার করার ফলে মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রহিত হয় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
খাদ্যাভ্যাসঃ আঠালো চকলেট,ক্যান্ডি, চিপস বা অন্য যেকোনো খাবার যা দাঁতের ফাঁকে জমে থাকতে পারে সেসব খাবার কম খাওয়া,আর খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁত পরিষ্কার করে নেয়া। কোমল পানীয় দাঁতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, তাই এটিও পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।
সর্বোপরি, দাঁতের যেকোনো সমস্যায় বিশেষজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।।